পেঁয়াজের প্রধান রোগ ও সমাধান: সম্পূর্ণ গাইড
পেঁয়াজের প্রধান রোগ ও সমাধান: সম্পূর্ণ গাইড
পেঁয়াজ চাষে রোগবালাই একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সঠিক সময়ে রোগ শনাক্ত ও প্রতিকার না করলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। এই ব্লগে, আমরা পেঁয়াজের প্রধান রোগগুলোর কারণ, লক্ষণ ও সমাধান নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
১. থ্রিপস (Thrips)
পাতায় রূপালি বা সাদা দাগ দেখা যায়।
পাতার কিনারা শুকিয়ে যায়।
গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং ফলন কমে যায়।
জৈব পদ্ধতি: নিমের তেল (৫ মিলি/লিটার) স্প্রে করুন।
রাসায়নিক পদ্ধতি: ইমিডাক্লোপ্রিড (০.৫ মিলি/লিটার) বা স্পিনোস্যাড (০.৫ মিলি/লিটার) স্প্রে করুন।
সাংস্কৃতিক পদ্ধতি: আগাছা পরিষ্কার রাখুন এবং ফসলের আবর্তন করুন।
২. পেঁয়াজের মাছি (Onion Fly)
গাছের গোড়া পচে যায়।
গাছ হঠাৎ মারা যায়।
মাটির নিচে পেঁয়াজের গায়ে ছোট ছোট গর্ত দেখা যায়।
জৈব পদ্ধতি: নিম খোল (৫ কেজি/হেক্টর) মাটিতে প্রয়োগ করুন।
রাসায়নিক পদ্ধতি: কার্বোফুরান ৫জি (১০ কেজি/হেক্টর) প্রয়োগ করুন।
সাংস্কৃতিক পদ্ধতি: ফসলের আবর্তন ও মাটির গভীর চাষ করুন।
৩. পাতার দাগ রোগ (Purple Blotch)
পাতায় বেগুনি বা বাদামি দাগ দেখা যায়।
দাগের চারপাশে হলুদ রিং দেখা যায়।
রোগ বাড়লে পুরো পাতা শুকিয়ে যায়।
জৈব পদ্ধতি: ট্রাইকোডার্মা (৫ গ্রাম/লিটার) স্প্রে করুন।
রাসায়নিক পদ্ধতি: ম্যানকোজেব (২ গ্রাম/লিটার) বা কপার অক্সিক্লোরাইড (২ গ্রাম/লিটার) স্প্রে করুন।
সাংস্কৃতিক পদ্ধতি: গাছের মধ্যে পর্যাপ্ত দূরত্ব বজায় রাখুন এবং সেচের সময় পাতায় পানি না লাগান।
৪. ড্যাম্পিং অফ (Damping Off)
চারা গাছের গোড়া পচে যায়।
চারা হঠাৎ মারা যায়।
মাটিতে সাদা ছত্রাক দেখা যায়।
জৈব পদ্ধতি: নিমের তেল (৫ মিলি/লিটার) স্প্রে করুন।
রাসায়নিক পদ্ধতি: কপার অক্সিক্লোরাইড (০.২%) দিয়ে বীজ শোধন করুন।
সাংস্কৃতিক পদ্ধতি: অতিরিক্ত সেচ এড়িয়ে চলুন এবং মাটি ভালোভাবে নিষ্কাশন করুন।
৫. ডাউনি মিলডিউ (Downy Mildew)
পাতার উপর হলুদ দাগ দেখা যায়।
পাতার নিচে সাদা পাউডারের মতো ছত্রাক দেখা যায়।
গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
জৈব পদ্ধতি: নিমের তেল (৫ মিলি/লিটার) স্প্রে করুন।
রাসায়নিক পদ্ধতি: মেটাল্যাক্সিল + ম্যানকোজেব (২ গ্রাম/লিটার) স্প্রে করুন।
সাংস্কৃতিক পদ্ধতি: গাছের মধ্যে পর্যাপ্ত দূরত্ব বজায় রাখুন এবং সেচের সময় পাতায় পানি না লাগান।
৬. বেসাল রট (Basal Rot)
গাছের গোড়া পচে যায়।
পাতার ডগা হলুদ হয়ে যায়।
পেঁয়াজের গায়ে গোলাপি বা সাদা ছত্রাক দেখা যায়।
জৈব পদ্ধতি: ট্রাইকোডার্মা (৫ গ্রাম/লিটার) স্প্রে করুন।
রাসায়নিক পদ্ধতি: কার্বেন্ডাজিম (১ গ্রাম/লিটার) স্প্রে করুন।
সাংস্কৃতিক পদ্ধতি: ফসলের আবর্তন করুন এবং মাটি ভালোভাবে নিষ্কাশন করুন।
৭. স্টেমফাইলিয়াম ব্লাইট (Stemphylium Blight)
পাতায় ছোট ছোট বাদামি দাগ দেখা যায়।
দাগ বড় হয়ে পুরো পাতা শুকিয়ে যায়।
গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
জৈব পদ্ধতি: নিমের তেল (৫ মিলি/লিটার) স্প্রে করুন।
রাসায়নিক পদ্ধতি: ম্যানকোজেব (২ গ্রাম/লিটার) স্প্রে করুন।
সাংস্কৃতিক পদ্ধতি: গাছের মধ্যে পর্যাপ্ত দূরত্ব বজায় রাখুন এবং সেচের সময় পাতায় পানি না লাগান।
৮. পেঁয়াজের মোজাইক ভাইরাস (Onion Mosaic Virus)
পাতায় হলুদ ও সবুজ মোজাইক প্যাটার্ন দেখা যায়।
গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
পেঁয়াজের আকার ছোট হয়।
জৈব পদ্ধতি: রোগাক্রান্ত গাছ তুলে ফেলুন।
রাসায়নিক পদ্ধতি: ভাইরাস প্রতিরোধী কীটনাশক স্প্রে করুন।
সাংস্কৃতিক পদ্ধতি: রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার করুন এবং আগাছা পরিষ্কার রাখুন।
৯. পিঙ্ক রুট (Pink Root)
গাছের শিকড় গোলাপি বা লাল হয়ে যায়।
গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
পাতার ডগা হলুদ হয়ে যায়।
জৈব পদ্ধতি: নিম খোল (৫ কেজি/হেক্টর) মাটিতে প্রয়োগ করুন।
রাসায়নিক পদ্ধতি: কার্বেন্ডাজিম (১ গ্রাম/লিটার) স্প্রে করুন।
সাংস্কৃতিক পদ্ধতি: ফসলের আবর্তন করুন এবং মাটি ভালোভাবে নিষ্কাশন করুন।
১০. হোয়াইট রট (White Rot)
গাছের গোড়া সাদা ছত্রাকে ঢেকে যায়।
পাতার ডগা হলুদ হয়ে যায়।
গাছ হঠাৎ মারা যায়।
জৈব পদ্ধতি: ট্রাইকোডার্মা (৫ গ্রাম/লিটার) স্প্রে করুন।
রাসায়নিক পদ্ধতি: কার্বেন্ডাজিম (১ গ্রাম/লিটার) স্প্রে করুন।
সাংস্কৃতিক পদ্ধতি: ফসলের আবর্তন করুন এবং মাটি ভালোভাবে নিষ্কাশন করুন।
পেঁয়াজের রোগ প্রতিরোধের সাধারণ টিপস
১. বীজ শোধন: বীজ বপনের আগে কপার অক্সিক্লোরাইড (০.২%) দিয়ে শোধন করুন।
২. ফসলের আবর্তন: একই জমিতে পরপর পেঁয়াজ চাষ এড়িয়ে চলুন।
৩. আগাছা নিয়ন্ত্রণ: আগাছা রোগের বাহক, তাই নিয়মিত পরিষ্কার করুন।
৪. সঠিক সেচ: অতিরিক্ত সেচ এড়িয়ে চলুন এবং মাটি ভালোভাবে নিষ্কাশন করুন।
৫. জৈব সার ব্যবহার: জৈব সার মাটির স্বাস্থ্য বজায় রাখে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
পেঁয়াজের রোগ সম্পর্কে ৭টি FAQ (বাংলায়)
উত্তর: এটি ডাউনি মিলডিউ রোগের লক্ষণ। মেটাল্যাক্সিল + ম্যানকোজেব (২ গ্রাম/লিটার) স্প্রে করুন।
উত্তর: এটি পিঙ্ক রট বা হোয়াইট রট রোগ। কার্বেন্ডাজিম (১ গ্রাম/লিটার) স্প্রে করুন।
উত্তর: এটি পাতার দাগ রোগ। ম্যানকোজেব (২ গ্রাম/লিটার) স্প্রে করুন।
উত্তর: রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার করুন এবং আগাছা পরিষ্কার রাখুন।
উত্তর: ইমিডাক্লোপ্রিড (০.৫ মিলি/লিটার) স্প্রে করুন।
উত্তর: অতিরিক্ত সেচ ও মাটির নিষ্কাশন না হওয়া।
উত্তর: নিমের তেল, ট্রাইকোডার্মা ও নিম খোল ব্যবহার করুন।